মায়ের কাছে সন্তানের অঙ্গীকার,


তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে


তবেই না বাড়ি ফিরবো


লক্ষী মা, রাগ করো না,


মাত্রতো আর কটা দিন।


সেদিন সকালের রোদে


কৃষ্ণচূড়ার আবির


আকাশের চূড়ায় লালঝুটি।


সেগুন ফুলের আঘ্রাণ গায়ে মেখে


রুপালি মাছের মতো


উজানে সাঁতার কেটে


ওরা আসে


এক-দুই-দশটি পাঁপড়িতে


যুথবদ্ধ রক্তকমল।


পরনে বর্ণমালার নামাবলী


দৃষ্টিতে সবুজ হাওয়ার মুকুল


ধমণীতে নির্ঝরের জলতরঙ্গ


হৃদয়ে মায়ের দুধের শিশির


কণ্ঠে শিমুল ফুলের আনন্দ।


ওরা যখন গান করে


কখনো নক্ষত্রের মতো উচ্চকিত


কখনো শিশিরের মতো নিঃশব্দ


কখনো মাটির শিকর আন্দোলিত


কখনো মায়ের চোখ ভিজে যায়।


তখন বেতের ফলের মতো বিপন্ন রোদ


মায়ের আঁচলে শাবকের মতো বেড়ে ওঠে


দৃষ্টিহীন অন্ধকার হিরন্ময় সুনেত্র


মৃত্যুর চৌকাঠে পলাশের বৈভব


এবং কুয়াশার মানুষ স্পর্ধিত মধ্যাহ্ণ।


হাওয়ায় মৃত্যুর গন্ধ


ব্যাধের কুটিল চক্রান্তে


সুপুরুষ পাখিরা নিহত


জননীর পুত্র নিরুদ্দিষ্ট


বোবা বয়াতি


কাগজের চোখে কথা বলে


ছবির একতারায় গান বাধে।


তারপর বিষন্ন শালিকের মতো


প্রবীণ দরোজায় সাবধানের শৃঙ্খল।


কৃষ্ণচূড়া আবার বেড়া ভাঙে


লোহার বেড়া


কখনো কমলের চোখের মত উৎক্ষিপ্ত


কখনো সহস্র ক্ষতের মতো প্রস্ফুটিত


কখনো উল্কার মতো অগ্নিগর্ভ।


এবং বাধেঁর ঘাস দাতে কেটে


অনায়াসে ভেদ করে শত্রুর ব্যুহ-


ছেঁড়া অন্ধ পোড়া চোখ স্ফুরিত অধর


গান গায় বিজয়ের গান।


তারপর যাহা থাকে যাহা কিছু অবশিষ্ট


প্রায় ঠোঁট প্রায় মুখ অথবা গোলাপ


সুফলা পলির মতো মেঘনার পাড়ে শুয়ে থাকে।


যারা ভালোবাসে


তারা যুদ্ধে যায়


যারা যুদ্ধে যায়


সকলে ফিরে আসে না


এবং যারা মায়ের কাছে ফিরে আসে


তাদের ঝুলিতে বর্ণমালার নুপুর


ঢেঁকিতে কিশোরী পা


ডুরে শাড়ি ঘাসের ফড়িং।


তখন জোনাকির মতো বৃষ্টি নামে


ধানের ক্ষেতে শামুক ওঠে


প্রবীণ বয়াতি একতারায় গান বাধেঁ,


সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান


কবিতা


রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ


কবিতা।