শহরের রং বদলে যাচ্ছে 



সুদীপ মন্ডল






দু চারদিন আগে বর্ষা চলে এসেছে
কলকাতায় আজকাল তো আর বর্ষা বলা যায়না নদী-নালা
, খাল-বিল, পুকুর স্স্ট্রীটএবং রাস্তঘাট  যা কিছু ভরে জলে তা তো নিম্নচাপে।  যাইহোক এই বৃষ্টিতে কলকাতা একটু আরাম পেয়েছে ভ্যাপসা
গরম থেকে। আসলে বর্ষাতে সক
লে ভোরে উঠে নিজের নিজের আনন্দে গাছ পাতা লতা সবুজ সবুজ হয়, রাস্তাঘা হাইওয়ে মুছে নাই তাদের কলঙ্কও, ঘৃণা, অভিমান, রক্ত এবং কষ্ট পশুপাখিরা আনন্দে মেতে
ওঠে তাদের প্রকৃতগত ক্রিয়ায়
এইসব এইসব অমিত আজ ভাবছিল তার
ট্যাক্সিতে বসে বসে।
আসলে বর্ষা এলে কাজ কম হয়ে যায় ট্যাক্সি চালকদের, কলকাতার অর্ধেক রাস্তা তো জলে
জলময়,
তাই বেশিরভাগ পয়সা কামিয়ে নিতে হয় গ্রীষ্মের সময়অমিত আজ প্রায় দশ বছর
ট্যাক্সি চালাচ্ছে এই কলকাতার বুকে তাই অলিগলি শর্টকাট সব জানা তার
অমিত আসলে ক্লাস নাইন অব্দি
পড়েছি, পড়াশোনায় খুব একটা খারাপ ছিলনা কিন্তু বাপটা চারদিনের জ্বরে মারা গেল
, এরপর চাকরির খোঁজ করতে
করতে এ
দূর সম্পর্কের কাকু
সাহায্যে ট্যাক্সি গাড়ি ধোয়ার কাজ পেল।
এই সব করতে করতে দিলীপ দা সাহায্যে গাড়ি চালানো শিখলোদিলীপ দা হলো লোকাল ক্লাবের দাদা।
প্রথম দেখাতে অমিতকে পছন্দ হলো দিলীপ
দার তার এরপর থেকে দিলীপ দার ফাইফরমাশ খেটে গাড়ির লাইসেন্স, ট্যাক্সি চালানোর পারমিট করে ফেললো​। এই দশ বছরে শুধু গাড়ি
চালিয়ে অমিত প্রচুর কিছু
করেছে তার বাড়ির জন্য।  বাবা মারা যাওয়ার পর  বাড়িতে খাবার লোক চারটে দুই বোন মা এবং ভাই।বোনেদের পড়িয়েছে এইতো কয়েকদিন
আগে ছোট বোনের বিয়ে দিল
ডায়মন্ডে হারবার , ছেলেটা মাছ বিক্রি করে।ছোট ভাই যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে।এইভাবে সে সংসারটাকে খাইয়ে-দাইয়ে বসতে শিখিয়েছে
হাঁটতে শিখিয়েছে এরপর ধীরে ধীরে দৌড়াতে শুরু করেছে সংসার যেভাবে  বাচ্চারা বাবা মায়ের হাত ধরে চলতে দৌড়াতে শেখে
আজকাল বেশ ভালোই চলছে সংসার বলা
যায়,
চারাপোনা আর ভোলা মাছ ছেড়ে আজকাল বাড়িতে একদিন ইলিশ ও মটন হয়।আসলে অমিতের বাড়িপলতা, আগে শুরুতে সারাদিন
গাড়ি চালিয়ে ট্যাক্সির মধ্যে ঘুমিয়ে রাত কাটাতো ,
আজকাল এসব করা যায় না ট্রাফিক পুলিশের বড় লাফড়াএখন ও বন্ধুদের সাথে একটা রুম
নিয়েছে বাগবাজারে সারাদিন খাটাখাটি করে হোটেলে খাবার
খেয়ে  সুন্দর এক ঘুমে সকাল।অমিত এই দশ  বছরে কত চেঞ্জ দেখেছে কলকাতাতে, দেখেছে কিভাবে
উত্তর কলকাতা ফিকে হতে হতে রং জমিয়ে তুলেছে -দক্ষিণ কলকাতা? কিভাবে গড়িয়াহাট
দেশপ্রিয় পার্ক এলাকা থেকে ধীরে ধীরে বাঙালি সরিয়ে ঢুকে পড়েছে গুজরাটি, আ
জকাল এসব অঞ্চলে  বাংলা থেকে বেশি হিন্দি শোনা যায় ।কালী মন্দির
ছেড়ে গড়ে উঠেছে সাইবাবার মন্দির আরো কত কি?
কলকাতা যেন ধীরে ধীরে কালো​ হতে হতে থাকলো দিনের পর দিন
।অমিতের এটা
দোষ বা গুন বলতে  পারা যায় বই পড়া। সে
লাইব্রেরী থেকে বিভিন্ন রকমের বই ন
েয় আর পরে ট্যাক্সিতে বসে বসে ।আর বিভূতিভূষণ, মানিক এবং তারা শংকরের সাথে সাথে পড়ে ফেলে সুনীল, শীর্ষেন্দু শংকর আরো কত নাম বলবো।সে তো একদিন  সুনীলবাবুকে ট্যাক্সি করে ছেড়েছে এবং
চিনতে পেরে বলে ফেলেছে আমি আপনার অনেক বই পড়েছি প্রথম আলো, সেই সময় এবং পূর্ব
পশ্চিম।
শুনে সুনীল  বাবু অবাক হয়ে বলেছিলেন তুমি এই গাড়ি চালিয়ে
বই পড়ো
উনি খুশি হয়ে একটা বই দিয়েছিলেন নিজে হাতে লেখে
কি যেন নাম বইটা
রানু ও ভানু।এই ভাবে অমিতের অনেক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আছে তার
এমন কি অদ্ভুত নেশা ও আছে ।যেমন অমিতের গাড়ীতে কোন
হর্নে নেইসে মনে করে এই হর্ন জন্য
অনেক মানুষের ক্ষতি হতে পারে
, সাহিত্য মনন
মানুষের চিন্তা ভাবনা চটকে  যেতে পারে তাই
তার গাড়িতে কোন হারেননি আর অর্থাৎ যে গাড়ি অমিত চালায়
তাতেও কোন হারেন রাখেনিএই বই ভালোবাসার  সূত্রে একদিন তার শুভদার সাথে আলাপ হয় তখন সে
পুতুল নাচের ইতিকথা পড়ছিল গাড়ি সাইডে
পার্ক করে তখন একজন খুব বেশি পাওয়ারের চশমা পরা মানুষ বলেছিল
যাবে কফি হাউস
,উত্তর অমিত
বলেছিল না
শুভদা অমিতের হাতে বই দেখে বলেছিল  বলেছিল তুমি ট্যাক্সি চালিয়ে বই পড়ো ইত্যাদি ইত্যাদি।এরপর নানা রকমের কথা  বলায় শুভদা কে কফি হাউসের ছেড়ে দিয়েছিল ,সেদিন শুভদা তো  কফি হাউসের নিয়ে গিয়ে কফি ও খাইয়েছিল অমিতকেএরপর থেকে প্রতি শনিবার শুভদা কে  ফি  হাউস ছাড়তো অমিতশুভদা একজন বড় অফিসার কাস্টমের এবং এছাড়াও নামিদামি কবি।বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়
লেখা বের হয়
 এবং ঐকতান বলে একখানা লিটিল
ম্যাগাজিন করেন উনি।
এখন তো এ পত্রিকার প্রথম পাঠক  অমিতএইভাবে অমিত শুভদার খুব প্রিয়
হয়ে উঠলো দিনের পর দিন ।
এই যে নতুন বইটা বেরলো শুভদা, সেটার উদ্বোধন
করলেও
অমিতআজকাল শুভদার বন্ধু মহলে অমিতকে সকলে
চেনে।
অমিত ও প্রচুর বই
পাই শুভদার  কাছ থেকে
এইভাবে সুন্দর দিন চলতে
থাকে অমিতের কিন্তু দুঃখ শুধু এক জায়গায় আজকাল খুব একটা ভালো ব্যবসা হয় না
লোকজন আর ট্যাক্সিতে চাপতে
চায়না।
একটু বেশি ভাড়ায় এয়ার কন্ডিশন কি সব যেন ক্যাব বাজারে ওলা উবের মেগা মেরু ইত্যাদি
ইত্যাদি।
রাত্রে ঘুমতে গিয়ে আজকাল অমিত ওই ওলা মেগা মেরু উবের স্বপ্ন দেখে আর ঘুম ভেঙে যায়।এই খাডাড়া হলুদ ট্যাক্সি থেকে ওই ওলা মেগা এবং মেরুতে ,এখন অনেক বেশি সুবিধা ইচ্ছে মত ফোন করে বুক করা যায় না
হয় মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করলে প্রথম ভবনে 200 টাকা ছাড় আব
ার ওলা মানি তো আরো দুর্দান্ত ব্যাপার।আগে ওলা একাউন্টে 500 টাকা
পাঠালে 500 টাকার সাথে 500 টাকার ভ্রমণ ফ্রি
অর্থাৎ পাঁচশো টাকায় হাজার টাকার হাজার টাকার ভ্রমণ।আবার ওলা উবের মেগা মেরু মানে  এসি।এছাড়াও কাস্টমারের বিলিং এর জন্য মিটারের গন্ডগোল নেই সব মোবাইলে বিল একদম সহজ সরল এবং টাটকা।তাই আজকাল সব ব্যবসা ওই ওলা ও উবেরদেরকলকাতা শহর যেন নিজস্ব রং
হলুদ অর্থাৎ ট্যাক্সি সেজন্য ধীরে ধীরে রামধনুর রঙে ভরে উঠেছে মেগা মেরু ওলা আরো
কত কিতে
? তাই সব সময় মেজাজ বিগড়ে থাকে
অমিতের এরপর আবার বর্ষা যে দু চার টাকা ভাড়া পাওয়া যেত সব শালা এই বৃষ্টি
ভেস্তে দিয়েছে।তাই সে ভাবলো অনেকদিন ধরে বড়
বোনের ছেলে ও মেয়ে কলকাতা ঘু
তে চাইছে ,এই সময় ঘুরিয়ে দিলে হয়।তাই সে ওদের কলকাতাতে আসতে বলল।একদিন বিড়লা তারামন্ডল ঘুরিয়ে দিল।পরের দিন নিয়ে গেল
মিউজিয়ামে
ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল আমাদের স্থাপত্য
ভাস্কর্য
মমি।যখনমিত  পুরনো দিনের তেলরঙে ছবিগুলোকে দেখছিল তখন ভিতরটা
তার কেঁপে কেঁপে উঠছিল।
যখন আলো আঁধারে হাতে টানা রিসকার ছবির দিকে তাকালো তখন দেখতে পেলো এইভাবে
এই ছবির পাশে লাগানো রয়েছে হলুদ কালো ট্যাক্সি নিয়ে ড্রাইভ
করছ অমিত। সামনে দাঁড়িয়ে ফরেনার রা বলাবলি
করছে   
what
a nice car before 30 years ago in Kolkata