কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য
লেখক / সংকলক : কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য

ডেয়ার ডেভিল কবি দীপঙ্কর… রেট্রোসপেক্টিভ মন্তাজ।
কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য।
উইলমিংটন -ডু পন্ট হোটেল-২০১৯
"খিসক্ লে অয় চট্টান/মড়া ঘাসের নিচে ঠ্যাং ফাঁক সাবিত্তির মাদি গুবরেদের ছিছিক্কার পিং করছি/রিকোয়েস্ট টাইমড্ আউট/রিমোট হোষ্টদের জানানো যাচ্ছে না---"(দীপঙ্কর দত্ত--মিড সামার নাইটস্ হাউল)
রাত্রিরা একের পর এক--দিনরাও --হিপ পকেটের সাদা কাগজ দীপঙ্করের ওয়ার বুকে ভাস্কর্য জোছনা সত্য--আর্জি-- গাঢ় কালো আর নীলের সফেদ সঙ্গম দেখতে দেখতে লাল পাখিটি উড়ান ভুলে যায়-গথিক স্থাপত্যের গম্বুজ চূড়োয় একটি মীন কেমন সাঁতার কাটছে--পাখিটি মাছটির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে পাশে বসল।পাখি আর মাছের নন ডিজিটাল আলাপ শুনতে শুনতে ডু প্যন্ট এর রুম থেকে আমার মন দিল্লি হাটের আড্ডায় লাট খেলো--
দীপঙ্করের হাতে সিগারেট--আলোটা আঁকিবুকি কাটছে চশমার ফ্রেমে।--পাবলিক প্লেসে সিগারেট খাওয়া মানা--
ধেত্তেরি--নিকুচি করেছে--"পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া ক্লোনদের কাজগুলো এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির অন্তর্গত।--আমাদের ব্রুহাহা ফিলগুড প্রোডাক্ট নয়-তারা ভোগবাদী সেবায় নিয়োজিত মার্কেটেবল আইটেম নয়।বাস্তববাদের রংগিলা পোঁচ না দিলে বাঙালি ক্রেতার কাছে কোনো পাঠবস্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।আমাদের ব্রুহাহা য় মাইমেসিসের বাস্তববাদ পরিত্যক্ত।কেন না বাস্তব কে জানতে পারা যায় না।আমরা বলতে চাইছি যে বাস্তববাদীরা প্রকৃতপক্ষে ভ্রমবাদী।ভ্রমবাদী কবিতা ,যা বাংলামিডিয়া ক্লোনরা লিখে থাকেন তা আদপে অবিশ্বাস কে দাবিয়ে রাখার প্রয়াস।"
লিংকন স্কোয়ারে র ব্রুহাহা রেষ্টুরেন্টে র সামনে মেয়েটি সিগারেট ধরায়-মেয়েটির হাঁটতে একটি জন্মদাগ-সাদা পল্কা ডট জামায় সূর্য আদর করছে--পাশে একটি চিকণ কালো সুঠাম রঁদ্যার ভাস্কর্য শরীর--ভালবাসা দেখতে দেখতে আবার দিল্লি হাটে ফিরি--
"আমাদের মনের ভাবনা চিন্তা গুলো বহু রৈখিক।--আপনি হয়তো রান্নাঘরে রান্না চাপিয়েছেন আপনার মন টা সাঁতার কাটছে কলেজের হল্লাবোলে"---
--কবিতা যখন থেমে এগোয় নাম দেখি না--শিরোনাম দেখি না--কবিতা তখন রক্ত স্রোত--
---আহা কী বললেন দিলীপ দা--আরেক পেগ খেতে ইচ্ছে করছে---দীপঙ্করের শব্দ ছররা গুলির মতো ডু প্যন্টের বেড স্প্রেডে--আছড়ে পড়ে
বরফের সাদা আস্তরণ ক্রমাগত ঢেকে দিচ্ছে পাথরের খাম্বা--রট আয়রণ টেবিল--বিজলি গ্রীলের চায়ের মাটির ভাঁড়--ফিস কাটলেট--
"ঘুর্শাল কিছুটা নিরাপদ ভেবে
আলসেইমার্স ওকে স্ট্যান্ড রাখি টিনশেড
বাওরি বুচ টানা হাওয়ার রুঝানে
তোরা কেউ একটু খ্যালা দে গান দে--
আমি এই তেপহর ম্যাক্সিমাম
মহেরৌলি শরীফ থেকে ফিরতি পথ--"(দীপঙ্কর দত্ত-শাগির্দ)--গমগম করছে দিল্লি হাট--সিগারেট পুড়ছে---সৃষ্টি সুখে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে কবি----
বায়বীয় জোছনায় ভেসে যায় আত্মাহীন রাজপথ,রেপিষ্টবাস,মাদারির খেলা দেখতে নতুন শিশু ভিড় করে সাজানাবাদের মীনা বাজারে,পরোঠাওয়ালি গলিতে রশিদ মিঞা রুমালি রুটি র তাওয়ায় ঈদের চাঁদ খোঁজে---আই আই টি গামী ডিটিসি বাসে উঠতে না উঠতেই--দীপঙ্কর আই এন এ মার্কেট এর গলিতে হারিয়ে যায়---
পৌর্ণমাসী--প্রিহোলি চাঁদ ঘটিত আড্ডা
১৭ নিউ ক্যাম্পাস-আই আই টি দিল্লি ২০০৪
আড্ডারু--দীপঙ্কর, গৌতমদা,অরূপ,দিলীপদা,প্রাণজি,
হোষ্ট--আমি--
চাঁদের ফেনা উপচে পড়ছে পেয়ালায়--মো করা সবুজালি ঘাস এ একটু আগেই জল দিয়েছে মালি--একটা অদ্ভুত ঘোর লাগা ঘ্রাণ---গ্র্যান্ডি আর দলু-দুই সারমেয় কে নিয়ে ঘাসের উপর ফটোজিনিক দীপঙ্কর।আসনপিঁড়ি--চন্দ্রমুখী--
দুটি হাত দুই সারমেয় কে আদর করে চলেছে--পাশেই গোল বেতের টেবিল ঘিরে চেয়ার পাতা--একটি পরির হাতে ধরা লাইট--কবিতা পড়ার জন্য--পরির শরীর বেয়ে ঝরে পড়ছে বাগদাদী ঝর্ণা--
দীপু--উঠে চেয়ারে বোস--গৌতম দার গলায় স্নেহ
--ঘাস তো এখনো ভিজে ভিজে---আমি
---"এখানে হৃৎডিপ পৌর্ণমাস চন্দ্র বোড়াবিষের মতো জেল্লাবান আদুর মুহব্বৎওয়ালা কাজরা।ফলে পাহাড় ব্যাকড্রপে যে টেন্টচাষ,ছপ্পর উজালো,রট আয়রন টেবলে জলসমুদ্দুর ও বিষের মধ্যবর্তী এক ধাপ ফিকে নীল রঙা চাদ্দর ডেনিম গড়ালো এটিলা ওটিলা।--
এই কবিতা র ডি-কোডিং হয় না---এমনটাই ভাবছিলাম---সবাই চুপ--চাঁদের নীল শ্যাম্পেন ছড়িয়ে পড়ছে--কৃষ্ণচূড়ার পাতায়---সাদা পাথরগুলি সেই শ্যাম্পেন তারিয়ে তারিয়ে পান করে যাচ্ছে---
জিরো আওয়ার--পাওয়ার পোয়েট্রি
--২০০৫-- দিল্লি হাট–
১৯৮৯ থেকে--২০০৫--দীপঙ্কর এর জিরো আওয়ার পত্রিকা পেরিয়ে এলো ষোলো বছরের প্রকাশ কাল।এই দীর্ঘ ষোলো বছরে জিরো আওয়ার প্রকাশিত হয়েছে পঁয়ত্রিশ বার এবং অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন ফর্ম এবং ফর্মাটে।দীপঙ্করের কথা গুলো গমগম করছে--"নির্মম,নিরপেক্ষ এই মহাকালের প্রেক্ষিতে এই ষোলো টা বছর মনেই হতে পারে যৎসামান্য, মনেই হতে পারে বুদবুদ--চামড়ায় এট্যুস ফুসকুড়ি---ষোলো বছর দিল্লিতে বসে লেখা আমাদের বাংলা কবিতায় আজকের তাত্ত্বিক, পোষ্ট মডার্ন আলোচকরা খুঁজে পাচ্ছেন হাইপাররিয়্যালিটি ,হাইপার টেক্সট, প্লুরালিজম,পোষ্ট কলোনিয়াল ফ্রাগমানটারিনেস,কেয়োটিক,সাবলটা
অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের কবিতা য় এসে পড়ছে সাবলটার্ন ফ্যাসাদ ও ঝটকা,এলিটিজম্ বিরোধী জঙ্গি আবহাওয়া।আমরা স্থা-বিরোধী ম্যানিফেষ্টো বের করলাম এবং ঘোষণা দিলাম --মিয়োনো,নিরপেক্ষ, উদাস --পিচ্ছিল, পমেটমড মরিয়েন্টাল ভাষার পরিবর্তে কবিতা র ভাষা হোক আক্রমণাত্মক, শ্লেষপূর্ণ ও ঝাঁঝালো--মদ্যপানের পর শরীরের আন্দোলন ও প্যাশন শূন্যে ও জ্যামিতি আঁকার যে অনায়াস দক্ষতা অর্জন করে ভাষার শরীরে ও লাগুক সেই টাঁড় উত্তেজনা।ভাষা মানুষের ঘুমবড়ি নয় ,চেতনার স্টিমুল্যান্ট।"
গার্ডেন অফ ফাইভ সেনসেস,,,
মুখোমুখি নয়,গোল হয়ে বসেছিলাম---দিল্লি হাটার্স এর কবিতা ক্যাম্প চলছিল--বসন্তশেষে দিল্লির রোদে ক্রমশঃ গ্রীষ্ম কালীন কামড়--হাওয়ায় আগুন আগুন ফাগুন--কথা টা হচ্ছিল--বিষয়হীনতা নিয়ে--একঝাঁক পাখির মতন লালনীলবেগুনি মেয়ে মেয়ে পোষাক হাসছিল--প্লেটো র রিপাবলিক এ উহ্য দুজন--পেঁয়াজ ও পুলিশ--গৌতমদা র কবিতা র লাইন শুনতে শুনতে দীপঙ্করের চোখ পাখি থেকে কবিতায়--
চশমার কাঁচ মোছার বাহানায় সবুজ লনে চোখ ফেলে--"আসলে একজন পদ্য লিখিয়ের অন্তর্গত ভিন্ন র সাবজেক্ট ম্যাটারটাই চাগাড় দেয় ভিন্ন কথনরীতির উদঘাটনে এবং এই এক্সক্লুসিভ আন্ডার লায়িং সাবজেক্ট ম্যাটার নিজেই অটোমেটিক্যালি ঢুঁড়ে নেয় তার কমপ্যাটিবল ফর্ম।
আমি--হুম--শুধু ফর্ম কী কেকের উপরের আইসিং মাত্র নয়---বি--
আমাকে থামিয়ে দিয়ে একটু মেজাজে র সঙ্গে ই দীপঙ্কর দীপঙ্কর লাইক--জবাব দিয়েছিল
-"এদান্তি বাংলা কবিতার বিষয়হীনতা নামক ক্যাচ ওয়ার্ড টি আমাদের কবিতায় খাটে না।আমরা কালগ্রসিত হতে পারি--। কিন্তু শেষ মলাট ওল্টানোর পর আমাদের কবিতার কোনো স্মরণযোগ্যতা একথা মেনে নিতে পারিনি ফলে-
আমি--স্মরণযোগ্য তা--কে তাহলে আপনি প্রাধান্য দিচ্ছেন--তাই তো---
দীপঙ্কর মুচকি হেসে নতুন লেখা কবিতার পাতাটি খুলতে খুলতে বলেছিল
--"এজন্যই মহিলারা সদা সর্বদা আমাদের হারিয়ে দেন---পেটের ভেতর থেকে গোপন কথাটি টেনে বের করতে আপনাদের জুড়ি নেই---"
সবার সাথে আমি ও হেসে ফেলেছিলাম- বড় বড় অর্জুন গাছেরা ও মাথা দুলিয়ে আগুন-ফাগুন এ সায় দিয়ে বলছিল---"হিয়ার।হিয়ার--"
মহাবলীপু্রমে বৃষ্টি--এবং দিল্লি হাটের কবিতা
জুন মাসের মহাবলীপু্রমে সাগরসৈকত।সন্ধ্যায় বালু মাড়িয়ে হাঁটছি--সাগরে ডুবকি লাগিয়েছে একটু আগে দিনের শেষ সূ্র্য।খাবলা খাবলা আলো লেগে আছে-- সন্ত্রাসী মেঘেরা ভয় দেখাচ্ছে ইতস্ততঃ।হোটেল সংলগ্ন এই সমুদ্র সৈকতে একাকী পায়চারি করতে বেশ লাগছিল--সমুদ্র মাঝে মাঝে ভিজিয়ে দিচ্ছিল পায়ের পাতা--হঠাৎ মুঠোফোন বেজে উঠলো--
--দীপঙ্কর বলছি।আজ দিল্লিহাটে এলেন না--
মনে পড়লো আজ শনিবার।
--"আমি এখন মহাবলীপু্রমে সমুদ্রের আদর খাচ্ছি--"
---"দারুণ।আমাদের হাট জমজমাট।দিলীপ দা,প্রাণজি, গৌতমদা ,অরূপ দা--সবাই--রবীনদা দারুণ কবিতা পড়লেন।
আমি মনে মনে বিচরণ করছিলাম দিল্লি হাটের বিজলী গ্রীলে---
আপনার কবিতা নিশ্চয় পড়া হয় নি--
প্রাণজির গলা পেলাম--দীপঙ্কর সবার শেষে পড়ে--আপনি তো জানেন--
হ্যাঁ--দীপঙ্করের কবিতার পর আর কেউ কবিতা পড়ি না আমরা
--আমাদের এখানে ভীষণ গরম--দিল্লিতে এখনো বৃষ্টি নেই
--এখানে সন্ত্রাসী মেঘেরা লালচোখ দেখাচ্ছে--সমুদ্রের ফেনা মুখে দৌড়ে আসছে অশ্বমেধের ঘোড়া
--দারুণ।--
--দীপঙ্কর--আপনার কবিতা পড়ুন---আমি ও শুনবো
দিল্লি হাট থেকে মহাবলীপু্রমে র সমুদ্র ফেনায় আছড়ে পড়লো দীপঙ্করের কবিতা
--এপিথেলিয়ামে আলোকণা জরো
উজেনেসিসে নিটোল সূর্য টিউব বাহিত হয়ে আসে
আর তাকে নিষেক দেয় ঝড়ের সিম্ফনি
ঘনিয়ে উঠছে ঝড়ের সিম্ফনি
সসারের ডফলী থেকে ঘনিয়ে উঠছে ঝড়ের
থার্ড সিম্ফনি
আর জাইগোট ফর্ম নিচ্ছে এক কাউন্টার কর্ড
যা আষ্টেপৃষ্ঠে পাক খেয়ে বিপরীত ক্রমে
ঘুরিয়ে ছাড়ছে ঐ বিকট তীব্র লাটিম---
থার্ড সিম্ফনি র মতো লাটিম এর ঘূর্ণী তে বঙ্গপোসাগর বালুবেলাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ায়--দীপঙ্করের কবিতা র মতো বৃষ্টি নামে মহাবলীপু্রমে---রঙিনছাতার আশ্রয় খুঁজি---
কবিতা ক্যাম্প--ঠেক--দিল্লি-ফরিদাবা
--চাঁদের হাট ছিল--অথবা মেহফিল--শীতকালীন হরিয়ানা র রুখা শুখা মাঠে দ্রৌপদী এখন কাঠকুড়ুনি---রবীনদার কথার খেই ধরে দীপঙ্কর
--তো রবীন দা ইহ দিল্লি
--হা পুত্তর--ইহ দিল্লি
এইখানে বসে পৃথ্বীরাজ চৌহান তাঁর মাশুকা সংযুক্তার সঙ্গে ছুপাছুপি খেলতেন--বাদশা আওরঙ্গজেব নিজের টুপি নিজে সেলাই করতেন আর মক্কা শরীফের স্বপ্ন দেখতেন--
এই সেই দিল্লি যেখানে নাদির শা দিন ধাড়ায় কোতলে আম্ করেছিলেন---এই সেই দিল্লি যেখানে বসে র্যাডক্লিফ এক কাল্পনিক কলমের ছোঁয়ায় ভারত তথা বাংলা ভাগ করেছিলেন--
এই সেই দিল্লি যেখানে --
আমি খেই ধরলাম--যেখানে বসে আমরা কবিতা লিখছি--
টলটলে সোনালী পানীয়ের গেলাসে চুমুক দিয়ে দীপঙ্কর
তো আমাদের কবিতার ভাষা পৃথক হইবে না কেন??ভাষা কাঠামোয়,বাক্য সংগঠনে,শব্দ এবং শব্দের প্রয়োগ শৈলী তে আমরা আমরা-ই।দীপঙ্কর একটু গলা চড়িয়ে বলল--আমাদের কবিতা য় কোনো ম্যাজিনো লাইন নেই।মানি না।কোনো রকম প্রাদেশিকতার LOC
নেই আমার /আমাদের কবিতা য়।
বাংলা,বহির্বাংলা,বাদবাংলা--ইত্
জিরো আওয়ার---।ফলতঃ টিপিক্যাল বাংলা কবিতা র সঙ্গে আমার/আমাদের কবিতা র চরিত্র গত একটা পার্থক্য প্রথম পাঠেই মহেসুস করা যায়--পাঠক কখনোই নিউট্রাল থাকতে পারে না--তাকে রি-আ্যক্ট করতেই হয়---
দীপঙ্কর তার পাওয়ার পোয়েট্রি র ব্রজঘাট--কবিতা টি খুললো
--নিশির ডাক আসছে আ্য ওরটা,ভেনাকাভার কালভার্ট বার-লাউঞ্জে র উই আওয়ার্সে আর স্লিপার গলিয়ে অনর্গল বেরিয়ে পড়ছে ভাল্ভ ট্রিকাসপিড পাল্মোনারিরা।
শূন্য কাল---
--একটা কাব্য নাট্য দিন--শূন্য কালের জন্য
করা হচ্ছিল দিল্লি হাটের আড্ডায়---
ই ম্যাগাজিন শুরু করছি---
কাব্য নাটক--কাব্য বেশি থাকবে না নাটক?
দুটো ই থাকবে--তবে কোনটা কম কোনটা বেশি--সেটা নিয়ে কোনো থিয়োরি নয়---
লিখেছিলাম---একটি গিলোটিন এবং তিনটি ঈশ্বর তনয়-
দীপঙ্কর আমার হাতে লেখা থেকে টাইপ করেছিল--টাইপ করতে করতে ফোনে কনফার্ম করে নিত--
আপনি টাইপ করতে শিখুন
পরের লেখা--কাব্য ডায়েরি ওকে টাইপ করেই পাঠিয়েছিলাম-- চিন থেকে ফিরে লিখেছিলাম--মেগলেভ ব্যাঙ্কারে হাজার বুদ্ধের জিনান--। আমি যে এধরনের কাব্য ডায়েরি লিখতে পারি--কাব্য নাটক লিখতে পারি--জানতাম না---সম্পাদক দীপঙ্কর দত্ত আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিলো---একজন কবি হিসেবে তো বটেই--একজন সম্পাদক হিসেবে ও দীপঙ্কর দত্ত--সমভাবে ধনী।
স্পিলন্টার্স--ডি ডি
---দিল্লি হাটের আড্ডা শেষে আমি, অরূপ আর দীপঙ্কর--দিল্লি হাটের বীপরিত এ আই এন এ র বাসস্টপে অপেক্ষা রত।
--আপনাকে বাস ধরিয়ে দিয়ে আমি আর অরূপ একটু বেপরোয়া--বোহেমিয়ান আড্ডা দেবো
আমি---আপনাকে নিয়ে একটা নভেলা লিখবো
দীপঙ্কর সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে
--কেন?
---আপনার মধ্যে একটা নভেলা র উপাদান রয়েছে
--ইন্টারেষ্টিং!!
অরূপ---যেমন??
আপনার যাপিত জীবন এবং কবিতা জীবন---দুটোই বোহেমিয়ান---
--ট্রাজেডি না কমেডি??--দীপঙ্কর এর চশমায় কৌতুক এবং কিছুটা কী বিষাদ???
----পাঠক কোনটা বেশি খায়?
---কি জানি---বোধহয়
--"ট্রাজেডি--'দীপঙ্কর হাত দেখিয়ে আই আই টি গামী বাস থামিয়ে--"উঠে পড়ুন---পৌঁছে একটা মেসেজ ছেড়ে দেবেন--
একদিন আপনার সঙ্গে বসবো--নভেলা নিয়ে--বুজ্ হতে হবে---
গাড়োলের মতো চিৎকার করে ডিটিসি বাস ছেড়ে দিয়েছিলো---
----ভালসাওয়া লেকের জলে নৌকো---২৬ শে জানুয়ারি র সূর্য শেষ কিরণধারায় রং মাখিয়ে ডুব দিচ্ছে--অগ্নি--দিলীপ দা,দীপঙ্কর, আমি--ঋতু পর্ণা--কেউ একজন গান ধরেছিল---তারপর দীপঙ্কর কবিতা- র পাতা--)
শাবলের ঘায়ে যে কটা শার্শি ফাটে
আলোর ঝাঁঝরি ধ্বক এসে লাখো কারসরে ছড়িয়ে পড়ছে মোৎসার্ট
জ্যাকেটের একলিপ্স শেষ হলে ল্যংটা দেওয়ালে পিঠ একা লড়ি
দেখি আগুনে জ্বলছে সে আর ঝাপটাচ্ছে দুপাশে র প্যাডেল
স্পোক ফেটে ফেটে তাজা শাঁস ছেৎরে যাচ্ছে দেওয়ালে----
লাল ছোপ দাগ রেখে লেক আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়
দিল্লি র রেলওয়ে হাসপাতালে মা--দীপঙ্কর নির্জন অনিশ্চয়তা নেমে আসছে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে---কার্ণিসে কার্ণিসে মেঠো ঝুল-- দীপঙ্কর নাড়ি ছেড়া শিশু র মতন অবোধ---
নির্বিকল্প নিরাকার মা শব্দ দেয়ালে আছাড় খায়----
গড় গঙ্গার জলে যেমতি ভেসে যায় অস্থি টুকরো---মা শরীরের শেষ পার্থিব চিহ্ন---তেমতি ভেসে যায় অপ্রকাশিত কবিতা র ছেঁড়া টুকরো--
একি।একি--এভাবে--
যাক--যাক--ভেসে যাক--এ আমার কবিতা তর্পণ---
ভেসে গেল গঙ্গার তরঙ্গে তরঙ্গে নাচতে নাচতে কবিতা র ছিন্ন খাতা--
আলোকিত।মঞ্চে কবিতা পাঠ করে নেমে আসতেই দীপঙ্কর ঝোলা কাঁধে উঠে দাঁড়ালো।
চলুন যাওয়া যাক---
--আপনার কবিতা পড়া বাকি তো।একটু পরেই তো ডাকবে।
--কবিতা পড়তে ইচ্ছে করছে না--
মানে টা কী?? নতুন কবিতা নিয়ে এসেছেন--না পড়েই চলে যাবেন?
হ্যাঁ--মুড নেই--পড়বো না--
আমি আর দিলীপ দা দীপঙ্করের সাথে হাঁটতে থাকি।
গৌতম দা--আমাদের দিল্ল হাটার্স এর সব কবি কে একসাথে ডাকলেই তো ভালো হতো---
দীপঙ্কর মেলার বাইরে এসে সিগারেট ধরিয়ে বলে
-- ছাড়ান দেন- চলুন বেঙ্গলি মার্কেট বসে একটু আড্ডা মারা যাক--
সেই ভালো।সেখানেই আমরা আপনার কবিতা শুনবো---
জমিয়ে চা আর সিঙ্গাড়া(সমোসা নয়)-খেতে খেতে দীপঙ্কর নিজস্ব ডেয়ার ডেভিল গলায় নতুন কবিতা ল পাতা পড়তে শুরু করলো
যে ফেরার কার্তুজগুলি রিভলবারের খোঁজে এসে দুরাত হল্ট করে গ্যাছে
তাদের সকসের উৎকট বারুদ গন্ধের ব্যাপ্তি এই ফিল্ড
স্লিপে কেডস গালি একটু কার্ভ হয়ে রুকস্যাক
আর ফাইনলেগ ডীপ থেকে মৃত ডাহুকগুলির ওপর দিয়ে গড়াতে গড়াতে
ক্রিজের গা ঘেঁষে দাঁড়ায় খনিজ জলের এক ঠান্ডা বাষ্পময় বোতল--
--/কেউ যখন ভাষা দিয়ে ভাষার প্রথা বা সিস্টেম ভাঙতে নামেন ,সর্বাগ্রে তাঁকে প্রথা বা শাসন গত ভাষাটির পালটা জবাবে নিজের 'নতুন' ভাষা তৈরী করতে হয়।ঈশ্বর গুপ্ত বা দীপঙ্কর দত্ত রা শুরু থেকেই সজ্ঞানে সেটা করে থাকেন।আর ,সেখানে কবিতা, অর্থাৎ, চেতনা হল একটি মেধাসম্পন্ন আয়না।কে পরে টিঁকে থাকবেন ,আর কে মাঝপথেই ধাবাড় মেরে যাবেন তার ফোরকাষ্টিং নখদর্পণ।দীপঙ্কর দত্ত যদি ভেবে থাকেন এবং আশা করেন-যা তিনি লিখছেন অর্থাৎ ,তাঁর ভাষার নিজস্ব
ভাষার প্রস্তুতি, ধরতাই যাবতীয় বিক্ষেপ,ভাবনার প্রতিটি প্যাঁচ এবং পটকে দেয়ার এনট্রপি একদিন না একদিন অবশ্যই শিক্ষিত পাঠকের মগজে অভিঘাত দেবে যা তার অভিপ্রায়ে র সমতুল ,তাহলে তৃণমাত্র ভুল ভাবছেন না--"---অজিত রায়--দীপঙ্কর দত্তের কবিতা--(২০০৭)
-
টেক্সট মেসেজ টু মি
১৭ই অক্টোবর--২০১৬
আমার ওষুধ পর্বে বেঁচে থাক এইসব রুমাল ও টিস্যু পেপার।ট্যাক্সিতে ঘেমে গেলে একটি ভালবাসা র রুমাল এসে পড়ুক এ মুখে --যতদিন বেঁচে আছি।বাকি সব তো মৃত্যু।এটুন জীবন।
একটি ছেলে দারুণ কবিতা লেখে,গদ্য লেখে--বয়স ৩০।অবিবাহিত।দুরারোগ্য কিডনির অসুখে ভুগছে।বন্ধু বান্ধবের ভালবাসা সম্বল করে বেঁচে আছে কোচবিহার এ,কলকাতায়---আমাদের দিল্লি হলে কবেই মৃত্যু হতো প্রেমহীনতায়---
১৭ ই ডিসেম্বর--২০১৬
-আজ বেলা ১২ টার পর শূন্য কাল বেরুবে।আপনাকে লিংক পাঠাবো।আপনার পেজ টার আলাদা লিংক--আপনি কি দিল্লিতে নেই--
-//না দীপঙ্কর।আমি এখন গৌহাটি র্যাডিসন হোটেলের ৩১৬ নম্বর রুমে--
--কী করছেন একা একা--
---কাঁচের জানালার ওপারে পাহাড় আর রেললাইন--দূরের ঝিলে সাদা বক--ডানায় নীল রোদ--
--নীল রোদ--ইন্টারেষ্টিং।কবিতা য় আনুন--
২০১৬-২৩শে অক্টোবর
--"চোরাবালি থেকে কখনো কখনো মাথা খুঁজে /এক প্রস্থ ধড় খুঁজে খুঁজে জুড়ে ইন্দ্রপ্রস্থে একা /ফুলটু স্কিজয়েড খচ্চর চালনা শিখেছি অভিজাত ভিড়ে--"
আমার নতুন কবিতা র বই --ব্রেইলবর্ণ বিষহরি(সঙ্গে প্রচ্ছদ এবং অজিতরায়ের ছোট্ট ভূমিকা সহ) বেরুচ্ছে কলকাতা বই মেলায়। আমি এবং গৌতম দা নন্দন লিটল ম্যাগাজিন মেলা উপলক্ষে কলকাতা যাচ্ছি--১২ ই জানুয়ারি র টিকিট কাটা রয়েছে---"
--৩১ শে ডিসেম্বর--মধ্যরাত
খুব বেশি ড্রিংক নয়--একটু --২০১৭ এসে গেলো।খুব আনন্দে থাকুন।দীর্ঘ জীবী হোন।আপনার সন্তান যেনো থাকে দুধে ভাতে।
হ্যাপি নিউ ইয়ার---
২রা জানুয়ারি ২০১৭
কুয়াশা--পীযূষবিশ্বাসের ট্রেন অনেক টা লেটে ছেড়েছে--জানি না--আমার ট্রেন ঠিকমত ছাড়বে কিনা---
---//
১০-ই জানুয়ারি---২০১৭
ছিন্ন হলো সকল যোগাযোগ।মুক্ত হলো কবি--
সমূহ চিতার আগুনে পুড়ে যাচ্ছে কবি র দেহ--কানে বাজছে হিন্দন রিভারের গান--চিতায় রেখে দিলাম রজনী গন্ধার মালা---
কিছু সংলাপ শবদেহের আগুন ছাপিয়ে
--আপনি মহিলা--নইলে আপনাকেই আমার মুখাগ্নি র অধিকার দিয়ে যেতাম-
--ফিরিয়ে নিন কথা--আমি আপনার থেকে বয়সে বড়-আগুন গ্রাসিত শরীরে কোনো মোহ মায়া থাকে না--গাজিয়াবাদের শ্মশান কিছুটা সময় পর কিছু ছাই ফেলে দিল- ধিকি ধিকি আগুন তখনও---
কবি র প্রতি কবি--
--//কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য
(মাই হোমেজ টু ডেয়ার ডেভিল পোয়েট--দীপঙ্কর দত্ত)
পোষ্ট মডার্ন ব্রুহাহার কাঁটা চামচ থেকে ছলকে পড়া কিছুটা লালা মেশানো গ্রীলড্ চিকেন।
শব্দের সাগরে ভাসতে ভাসতে কবি শব্দ ভুলে যায়
মাথার উপর আকাশে ভেসে যাচ্ছে কাগজের
পাতা কিংবা নৌকো
কবি বমন করে আর হাহাকার
আমি তো নতুন কিছু বলতে পারছি না
পৃথিবী যেন একরাশ আরশি
আর মুখগুলো ও রিপিট করছে
ভাবতে ভাবতে কবির মুখটাই পাল্টে গেলো
কবি ক্রমশ ই একটি আগুন ডানা র
চড়ুই পাখি
কবির শরীর হয়ে গেলো একটি প্রজাপতি টানা
জুড়ি গাড়ি।
কবির সব কবিতা মহাকালের মহাফেজ খানায় একটি কুয়াশা মাখা সূর্য দলিল
অনেক অনেক হিমযুগ পেরিয়ে আরেক কবি চোখে নতুন চশমা পরে কবিতা গুলোর
ডি কোডিং করতে করতে কপালের ঘাম ঝরাবে
আর কবিতা গুলো একটি
একটি স্বচ্ছ হ্রদ,ঝিল অথবা
পাহাড়
হয়ে যাবে-।