দূর্বাদল মজুমদার
লেখক / সংকলক : iPatrika Crawler

দূর্বাদল মজুমদারের অনূদিত কবিতা
Dawood Azam
ইনিও সিরিয়ার কবি। কয়েকটি কবিতা ছাড়া এনার সম্পর্কে বেশি কিছু জানতে পারিনি। আরবিতেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখেন। নিচের কবিতাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ।
গর্ব
যুদ্ধক্ষেত্রের গল্পগুলো কী দারুণ! কত সহজেই হাততালি ও বাহবা দেওয়া যায়।
বীর্যবান ও মহান পুরুষদের জীবনী কত যে প্রেরণা দেয়।
পুরনো গানের কলি কত যে মিষ্টি! উচ্ছল মেয়েরা গাইতে গাইতে যায় বিপ্লবীদের গাথা।
থোকা থোকা ফুলের মতো মিষ্টি মেয়েরা শহীদের বেদীতে মালা পরাতে গেল।
কিন্তু কেউ কি শহীদের শরীরে দগদগে ঘা গুলোর কথা জিজ্ঞেস করেছে?
তার চোখের ভেতরে ঠাসা মৃত্যুর লেলিহ মুখ কি কেউ দেখেছে? অথবা তার কর্ণিয়াতে নাচতে থাকা আশার শিখাটি?
কেউ কি দেখল শহীদের মা আর ওই বিধবা বউটির বোবাধরা চোখের শেকলছেঁড়া প্রশ্ন গুলো।
কেউ কি হোঁচট খেয়ে পড়ল হাজার মানুষের স্বপ্নের বাড়িভাঙা খোয়া ইঁটে ?
গভীর রাতে গুমঘরের শেকলে বন্দী কোনও কবি কি কিছু লিখতে পারল?
না কি তাকে ছুঁড়ে ফেলা হল কোন কাঁকড়াবিছার গর্তে!
আমি সেই বৃদ্ধ মানুষটির কথা ভুলিনি, "গোয়াল ঘরে আগুন দিলে গৃহস্থ কি বাদ পড়ে যায়?"
Ibtisam Barakat
প্যালেস্টাইনের বেইট হানান শহরে জন্ম। বাবা -মার সঙ্গে তিনবছর বয়সে উদ্বাস্তু হয়ে ইজরায়েলের ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এলাকায় শৈশবের পড়াশুনো ও বেড়ে ওঠা। ১৯৮৬ সালে আমেরিকার মিশৌরি ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় ডবল এম এ। সমস্ত মধ্যপ্রাচ্যে The Nation পত্রিকার হয়ে সাংবাদিকতার কাজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর লেখালেখির বেশিরভাগই বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনার ঘনঘটা। এখানে রইল তাঁর একটি কবিতা।
"আমার বারান্দার বাইরের গাছগুলো"
আমাকে আফগানিস্তানের গাছগুলো মনে করিয়ে দাও।
ওরা সেই হরিৎ-মেঘপুঞ্জ হয়ে মাটিতে নেমে এসেছে আমাদের আত্মাকে আলো দিতে
আর ওদেরকে নিয়ে যাবে এক আনন্দনগরে।
মনে আছে, শিশুরা কেমন চিৎকার করতে করতে গাছে চড়ে?
যাত্রীরা বিমানে উঠছে আর আপাহিজ-শৈশবের জানালা দিয়ে মেলে ধরেছে তাদের বোবা-চেয়ে থাকা।
এয়ারপোর্টের ধূলোমাখা বাদামী গাছগুলো পরস্পরের দিকে চেয়ে হাসছে।
যেভাবে আমরা বন্দুক ধরে থাকি
তারা সেভাবেই মুড়ে রেখেছে তাদের ডালপালা।
দেখো
কাবুল এয়ারপোর্টের সমস্যাকে যেভাবে দেখাচ্ছো এটা তার চেয়েও বড়ো কিছু।
প্রতিটি মানুষ তার সাথে গোটা আফগানিস্তান নিয়ে যেতে চায়।
কে আর পারে ভালোবাসা পেছনে ফেলে যেতে?
এই অভিযাত্রীরা খুঁজছে অজানা দেশের ভেতর কোন কাঙ্ক্ষিত আস্তানা।
আসলে আফগানিস্তানের মাপে একখানা বিমান চাই।
অথবা এইগ্রহের বাকি সমস্ত দেশগুলোকেই পাঠিয়ে দাও ওখানে উষ্ণতা আর শুশ্রূষা সমেত।
বড়ো ধূসর হয়ে গেছে আফগানিস্তান প্যাস্টেলে ছেপে ওই চাদর দিয়ে মুড়ে দাও তাকে।
Kadhem Khanjar
ইনি একজন ইরাকি কবি। অন্যান্য কবিবন্ধুদের সঙ্গে "সাংস্কৃতিক সৈনিক" নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন যাদের কাজ ছিল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইরাক ও সিরিয়া নিয়ে কবিতা লেখা। তাঁর দুখানি কবিতারবই ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। picnic with an explosive belt এবং blood dealer. নিচের কবিতাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ।
"ব্রেকিং নিউজ, সামনেই একটা গনকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে.... "
গতকাল খুন সংক্রান্ত একটা মামলায় আমাকে ডেকেছিল।তারা আমার ডি এন এ চাইল, তারা কিছু অজ্ঞাত হাড়গোড় খুঁজে পেয়েছে যা আমার সঙ্গে ম্যাচ করতে পারে। আশার ছুরির উপর কমলালেবুর মতো আমি ঘুরতে থাকলাম।
এখন আমি বাড়িতেই আছি, ভাই আমার! তোমার ছবিতে ঝোলানো প্লাস্টিকের ফুলমালায় ধুলো জমেছে। সেগুলো ঝেড়ে মুছে অশ্রু দিয়ে তাজা করে তুলছি।
###
ব্যাগভর্তি হাড়গোড়, এইমাত্র সই করে নিয়ে এলাম, মেডিকেল রিপোর্ট বলছে এগুলো তোমার। কিন্তু সামান্যই। ওদের সামনেই আমি এগুলো টেবিলে সাজিয়ে রেখে গুনলাম; ছয় গর্তওলা একটা মাথার খুলি, একটা কোমরের হাড়, তিনটে বাঁকানো হাড়, একটা ভাঙা জানু, এক আঁজলা কব্জির হাড়, এবং গোটাকয়েক শিরদাঁড়ার অংশ।
এই সামান্য হাড়গুলো কি আমার ভাই হতে পারে!
অথচ মেডিকেল রিপোর্ট তাই বলছে।
আমি হাড়গুলো আবার ব্যাগের ভেতর কুড়িয়ে নিলুম। হাত দিয়ে টেবিল মুছে নিয়ে গুঁড়োগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলুম হাওয়ায়।
তোমাকে পিঠে নিয়ে আমি নেমে এলাম রাস্তায়।
###
বাসে উঠে আমি ব্যাগটা পাশে রাখলাম। দুটো টিকিট কাটলাম(আগে ও-ই টিকিট কাটত, এখন আমি কাটলাম)।আমি এখন বড় হয়ে গেছি তোমাকে পিঠে নিয়ে যেতে পারি এমনকি বাসভাড়াও দিতে পারি।
###
আমি কাকেও বলিনি যে আমি তোমার সামান্যই পেয়েছি। দেখলাম বৌদি আর তোমার ছেলেমেয়েরা সোফা ঝাড়পোঁছ করছে।
আমি চাইছিলাম ওদের একজন অন্ততঃ এই ব্যাগ খুলে দেখুক শেষবারের মতো। কিন্তু তুমি এমন হাড়ালো চিৎকার করে উঠলে!
ওরা আমার কাছে সোফায় কেন চোখের জলের দাগ লেগে আছে, জানতে চাইল।
###
ঘন্টাখানেক পর আমি তোমাকে কফিনের মধ্যে সাজাতে চেষ্টা করলাম।কেবলমাত্র পেরেকগুলোই জানল কংকালটা কত সামান্য।