অনুবাদঃ শিরীষ


রাতের আঁধার থেকে স্মৃতির কুহকে ভেসে যাই

নদীর আর্তনাদ মিশে গেছে সমুদ্রের বুকে

ভোরের একলা তৃণের মত আমি

আর কেউ নেই

কিছু নেই

মৃত পুষ্পের বরষায়

ধ্বংস কূপের গভীরে গভীরে ঢুকে যাই

ধ্বংস আর উড্ডয়নে মিশে আছ তুমি

তোমার বুকের কিনার থেকে উড়ে উড়ে চলে গেছে গানপাখি দল

এই অন্তরালের মত ডুবিয়ে দিয়েছ সব

সমুদ্র অথবা সময়ের মত সবকিছু ডুবে গেছে তোমার গভীরে

সে এক অন্য প্রহর ছিল রক্তের, চুম্বনের

জাদুর প্রহরে যেন জ্বলে ওঠা বাতিঘর

তোমাতেই ডুবে গেছে উচ্ছন্নের প্রেম, নাবিকের ভয়

শিশিরের শৈশবে আমার আত্মার জাগরণ, তার আলীন উড়াল

আহত পাখা – সবকিছু নিমগ্ন করেছ তুমি

কষ্ট জড়িয়ে ধরে ইচ্ছে ছুঁয়েছ তুমি

বিষণ্নতায় নির্বাক

তোমার সুকরুণ বুকে ডুবে গেছে সব

যত কামনা আর পৃথিবীর কাজ পিছু ফেলে

বানিয়েছি ছায়ার দেয়াল

– চলে যাই

হায় আমার শরীর,

হায় হারানো কিশোরী!

শুনে নাও বৃষ্টিপ্রহরের সব গান

কাঁচের বয়ামে তুমি অসীম মমতা রেখেছিলে

আর অবাক বিস্মরণে চৌচির হয়ে গেছ তুমি সেই মমতার কাঁচ

সুদূর দ্বীপের কোন আঁধার নির্জনতায়

ডেকে নিয়েছিলে

তৃষ্ণা ক্ষুধায় ছিলে

ধ্বংসে ব্যথায় ছিলে, তুমি বিস্ময়।

কী করে ধারণ করেছিলে বল

আত্মার নিগড়ে, আলিঙ্গনে!

কতটা অঘোর অথবা ক্ষণস্থায়ী প্রার্থনা ছিলো আমার

কতটা দুঃসাধ্য মাতাল, উদ্বিগ্ন লোভাতুর চাওয়া ছিলো তা !

সোহাগশ্মশান,

তোমার সমাধিতে এখনও প্রদীপ জ্বলে

পুষ্প ফলের শাখা পুড়ে পুড়ে যায়

পাখিরা ঠুকরে খায়

হায় এই দংশিত মুখ, চুম্বনসিক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ

আগ্রাসী দাঁত, জড়ানো শরীর

হায় আশা আর পীড়নের শংখজড়াজড়ি

যেইখানে মিশে গেছি, নিঃশেষ হয়েছিতুমি আমি

আলো আর জলের মত ছড়িয়ে গিয়েছে মমতারা সব

ধীরলয়ে কথা ফোটা ঠোঁটে

এই ছিলো আমার নিয়তি

ঐ একটাই কাঙ্খিত ভ্রমণ

সব চাওয়ারা মিশে গেছে সেইখানে, তোমাতেই নিমজ্জিত হয়েছে সব!

হায় ধ্বংসস্তূপের কূপ, সব ডুবেছেতোমাতে

কোন্ ব্যথাটা আশা করনি তুমি, ডোবনি কোন্ বেদনায়?

কোনো এক নাবিকের মত জাহাজের মাস্তুল থেকে

ঢেউ থেকে ঢেউয়ে তুমি ডেকে গেছ, গেয়ে গেছ—

তুমি এখনো গানের প্রসূন, স্রোত বেঁধে রাখ

ওহ ধ্বংস আমার বেদনা তীব্র কর

অন্ধ ডুবুরী, ব্যর্থ শিকারী

পথহারা নাবিক – সবাই যে ডুবে গেছে তোমার শরীরে

রাত যেই ক্ষণ বেঁধে দিয়েছে সমস্তদিনপঞ্জিকায়

চলে যাওয়ার সেই শীতল প্রহর এসে গেছে

অবাধ্য ঢেউ সব মিলে গেছে সমুদ্রতীরে

শীত নক্ষত্র জেগে ওঠে, রাত্রি পাখিরা চলে যায়

রাতভোরের নিঃসঙ্গ জেটির মত আমি

আমার তালুতে মুচড়ে ওঠে কম্পিত ছায়া

দূর থেকে দূরে, সুদূরে সুদূরে

এখন বিদায়

হে বন্ধু বিদায়!