মেঘ অদিতির এক গুচ্ছ কবিতা

 মেঘ অদিতি


সেতু


হৃদয়ের খুব কাছে সান্দ্র এই হাওয়ায়
এই তো সুনিপুণ বেণী খোলা সময়
তবু কেন সরে যায় ঝাউবন ছায়া?
একা হয় রেশমী রুমাল?

শেষবার 
বড় নিঃশব্দে এই সবুজ প্রবাল জ্বালছি
গাছের বাকলে লিখছি তার নাম
তবু কি অন্ধকারে ডুবে যাবে নিস্তরঙ্গ সেতু?

নহবত


আমাকে ডাকছে আজ স্পর্শজাত কোন ইল্যুশন!

ঢেকে নিচ্ছে বাকহীন চতুর ডানায়
অলৌকিক তামাশায় কোন প্রণয়ে 
স্তব্ধতার অভিপ্রায়ে ঘুমচিহ্ন এঁকে
বিরহ গাইছে বড় মেঘের ময়ূর!

ছায়াপথ ধরে আসা প্রগাঢ় আবেগে
আশরীর ভেসে যাই মৃদু জ্যোৎস্নায়
ফুটে ওঠে ফুল যেন ট্রাম্পেট ভাইন
স্রোতের ভেতরে খুব নহবত বাজে

অঙ্গীকার


এইতো মুখর হাওয়ার পুরনো গানের স্মৃতি
ভেতর-বাইরে তবু কত নেচে চলে মেদুর শরীর

সবুজ জমিনে হেসে চলে যায় সিল্যুয়েট নারী
দীর্ঘভূজা পুরপুরুষের দল
ঘুঙুর বাজিয়ে প্রতিবার ভেঙে ফ্যালে জলের আকর
যাপনের উপোহাসে উদোম অন্ধকারে
অসহজ নামতার দিনে
জীবন উজিয়ে চলে বহু দূরদেশে—  
যেন বা চলেছে কাফেলা
অচেনা কোনো মরূভূমি মুখে

ভারসাম্যহীনতার কাছে হেরে যায় ভাষার অঙ্গীকার…


দৃশ্যবতী নদী


তুমি ভাবো অসময়। ফিরবার পথ বুঝি নেই ।

মাঝরাতে ওই দূরে দেখো౼ 
মরুরেখা ধরে কোন ব্যথাতুর নদী বয়ে যায়
অসময়ে আলো হয় অতিকায় চন্দ্রমল্লিকা 
গ্রীষ্মবাগানে পাশা খেলে সূর্যকান্ত মণি
ভাবো যদি ফিরে যাবে নগর সন্ত্রাস সব মুছে 
ঢেকে নাও অস্থিমাংস যদি আজ গভীর পালকে
কী করে শুশ্রূষা দেবো তোমাকে আবার
নিয়ে যাবো পূণ্যস্নানে, দৃশ্যবতী নদীর ওপার?

আত্মহননের দিনে


যে ফুল দগ্ধেছে জেনো সয়েছে সে অসীম দহন
ভগবতী তুমি তার ডানা তবু করেছ হরণ
অজ্ঞাত বাসের পথ ঢেকে গেছে ঘুমের শিকড়ে
আড়াল খুঁজছে ফুল মধুকূপী ঘাসের আড়ালে

আকাশে ফুটছে কত লালনীল কার্তুজের তারা
ঋতুর মিমিক ছুঁয়ে বাগেশ্রীর সুর দিশেহারা 
মায়ের কোলেতে মুখ, নিভু স্বর, ঝরছে কাজল 
চোখের স্ফুলিঙ্গ মুছে ধেয়ে আসে বর্ষার জল

কত যুগ চলে গেছে বদল ঘটেনি চুপিসারে
বিমূঢ় আত্মাটি তার চাইছে প্রলয় এইবারে
পাতার আড়ালে মুখ পরাভূত কাঁপে দুরাশায়  
বাঁধা ছিঁড়ে পা বাড়ায় তারা খসা মরণ ছায়ায়