পাঞ্জাবী সাহিত্যে প্রথম জ্ঞানপীঠ পুরস্কার বিজয়িনী - অমৃতা প্রীতম



রেখা নাথ






অমৃতা
প্রীতম বিংশ শতাব্দীর পাঞ্জাবী ভাষার একজন প্রখ্যাত কবি ও লেখিকা । একশোরও
বেশী তাঁর কাব্যগ্রন্থ । কবিতা ব্যতীত তিনি আত্মকথা,প্রবন্ধ,গল্প ও
উপন্যাসও লিখেছেন । দু-তিনটে ব্যতীত তাঁর সব বই হিন্দী ভাষায় অনূদিত হয়েছে ।
কয়েকটি অন্যান্য ভারতীয় ভাষা ব্যতীত তাঁর লেখা রুস,জার্মান ইত্যাদি ভাষায় ও
অনূদিত হয়েছে । তিনি প্রথম মহিলা কবি ১৯৫৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে
সম্মানিত হন । ১৯৮১ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কারও পান । তাঁর "কাগজ তে
ক্যানভাস"; কাব্যগ্রন্থের জন্য । তিনি পাঞ্জাবী সাহিত্যে প্রথম জ্ঞানপীঠ
বিজয়িনী এবং মহিলাদের মধ্যে দ্বিতীয়, দিল্লি নিবাসী ছিলেন । ১৯৫৮ সালে
পাঞ্জাব সরকারের ভাষা বিভাগ দ্বারা পুরস্কৃত হন । ১৯৬১ সালে সোভিয়েট সংঘের
নিমন্ত্রণে বুলগেরিয়া যাত্রা করেন । ১৯৬৯ সালে পদ্মশ্রী ও ২০০৪ সালে
পদ্মবিভূষণ সম্মানে তাঁকে ভূষিত করা হয় । ৩১শে অগস্ট ১৯১৯ সালে গুজরানওয়ালয়
(পাকিস্তান) জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশব তাঁর অতিবাহিত হয় লাহোরে । পড়া-লেখাও
তাঁর লাহোরেই সম্পন্ন হয় । কৈশোরাবস্থা থেকেই তিনি কাব্যচর্চা আরম্ভ করেন ।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময় পাকিস্তান থেকে ভারতের লাহোরে চলে আসেন ।





যৌবনের
প্রথম উন্মেষকালে প্রেম ও যৌবনের উচ্ছল মাদকতায় পরিপূর্ণ যে কাব্য মদিরার
আস্বাদন তিনি পাঠকদের করিয়েছিলেন তা পরিণত সময়ের প্রবাহে আরো ধীর,স্থির ও
সংযমী হয়ে ওঠে । "কাগজ তে ক্যানভাস" কাব্যগ্রন্থে তাঁর উত্তরকালীন
প্রতিনিধি কবিতাগুলি সংকলিত হয়েছে । গহীন, গভীর ও বিষাদময় এই কবিতাগুলিতে
যুগ-যন্ত্রণায় বেদনাহত মানুষের দীর্ঘশ্বাস । ভারতীয় জ্ঞানপীঠের প্রাক্তন
ডাইরেক্টার শ্রী লক্ষ্মীকান্ত জৈন অমৃতা প্রীতমের রচনা সম্পর্কে বলেছেন –
নারীর শারীরিক,মানসিক ও ভাবগত সংরচনার প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও অনুভব কে অসাধরণ
পরিস্থিতির মধ্যে টেনসন, সংঘর্ষ ও উদ্দাম প্রেমের সহজ আবেগের অভিব্যক্তি কে
কুন্দনে পরিণত করেছে তার কৃতিত্বের সমীক্ষা ধমনীর রক্ত ও হৃদয়-স্পন্দন
দ্বারাই সম্ভব ।








অমৃতা প্রীতমের চারটি কবিতা –








এক টুকরো রোদ্দুর ( কবিতাঃ ধুপ কা টুকরা )








আমার মনে আছে সেই সময়


যখন এক টুকরো রোদ্দুর


সূর্যের আঙ্গুল ধরে


অন্ধকারের মেলা দেখতে


দেখতে ওই ভিড়ে হারিয়ে গেছে কোথাও


ভাবছি, ভয় ও নিঃসঙ্গতার একটা সম্বন্ধ আছে।


আমি তার কেউ নই


কিন্তু সেই হারিয়ে যাওয়া বাচ্চা


আমার হাত ধরে নিয়েছে।


তোমাকে কোথাও পাই না


হাতটাকে স্পর্শ করছে


একটা ছোট্ট কিন্তু তপ্ত শ্বাস


না হাত দিয়ে যাচ্ছে সামলানো


না ছাড়ছে হাতটাকে ।


অন্ধকারের কোনও পার নেই


মেলার কোলাহলের মধ্যে


এক নিস্তব্ধতার আবেশ


আর তোমার স্মৃতি যেন


এক টুকরো রোদ্দুর ।

(চুনী হুয়ী কবিতায়েঁ )





দুর্ঘটনা ( কবিতাঃ হাদসা )









কালের আরি হাসছিল


ঘটনার দাঁত ছিল তীক্ষ্ণ


অকস্মাৎ একটা পায়া গেল ভেঙ্গে


আকাশের চৌকি থেকে


কাঁচের সূর্য পড়ল গড়িয়ে


দু চোখে ছিতরে গেল বালিকণা


জখম হল নজর


কিছুই যায় না দেখা ।





আত্মমিলন



অমৃতা প্রীতম





আমার শয্যা হাজির


কিন্তু জুতো ও কামিজের মত


তুমি নিজের শরীর খুলে


ওই দিকে মোড়ার ওপর রেখে দাও


বিশেষ কোনও ব্যাপার নয়


কেবল নিজ নিজ দেশের রেওয়াজ মাত্র ।


(চুনি হুয়ি কবিতায়েঁ)





নিস্তব্ধতার ষড়যন্ত্র



অমৃতা প্রীতম





রাত্রি ঝিমোচ্ছে


কেউ একজন মানুষের হৃদয়ে সিঁধ কেটেছে ।


যে কোনও চুরির থেকে ভয়ংকর এই স্বপ্নের চুরি





চুরির নিশান


প্রতিটি দেশে প্রতিটি শহরে প্রতিটি রাস্তায় বিদ্যমান


কিন্তু কোনও চোখই দেখে না , না চমকায়


কেবল একটি কুকুরের মত শেকলে বাঁধা





কখনও কোনও সময় কেউ হয়ত কবিতা আওড়ায়


( কাগজ তে ক্যানভাস)